সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম খোকন

সিএমপি'র ট্রাফিক সার্জেন্টদের ঘুষ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে

Akter Hossain.mirsarai correspondent    |    ০১:৫৪ পিএম, ২০২২-১২-২৭


সিএমপি'র ট্রাফিক সার্জেন্টদের ঘুষ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)'র আওতাধীন সড়কে কর্মরত সার্জেন্টদের ঘুষ নেওয়ার প্রবণতাও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং অটোটেম্পো মালিক-চালকদের ৬ দফা ন্যায্য দাবী আদায়ের লক্ষ্যে এবং দাবি বাস্তবায়ন না হলে আল্টিমেটাম দিয়ে চট্টগ্রাম থ্রি-হুইলার অটোম্পো মালিক চালক আন্দোলন কমিটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা এগারোটা দিকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব আবদুল খালেক মিলনায়তনে উক্ত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম থ্রি-হুইলার অটোম্পো মালিক চালক আন্দোলন কমিটির আহবায়ক মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম খোকনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় শ্রমিক লীগ চট্টগ্রাম মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিববুর রহমান হাবিব, সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক মহিউদ্দীন কোম্পানী, হাশেম কোম্পানী, শাহেদ কোম্পানী, নান্টু কোম্পানী প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান, চট্টগ্রাম মহানগরীতে মেট্রো পলিটন যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি (আরটিসি) অনুমোদিত প্রায় ২১টি অটোটেম্পো রুট রয়েছে, যেখানে আনুমানিক ২,০০০ অটোটেম্পো রুট পারমিট অনুযায়ী চলাচল করছে। আরো প্রায় ১ হাজারের অধিক অটোটেম্পো সময়মত ফিটনেস সনদ, টেক্স টোকেন এর ফি প্রদান করে রুট পারমিটের জন্য আবেদন করে সড়কে চলাচল করছে। নগরীতে নগর বাসীর যাতায়াতের ৭৫ ভাগ সেবা প্রদান করেন এসকল থ্রি-হুইলার অটো টেম্পোর চালকরা। 

এ পেশার সাথে লক্ষ লক্ষ পরিবারের দৈনন্দিন আয় রোজগার জড়িত কিন্তু পুলিশ ও বিআরটিএ এর সমন্বয়ে গঠিত আরটিসি কমিটির কয়েকজন মালিক, শ্রমিক নেতা নামধারী অযোগ্য প্রতিনিধি এবং বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড বিরোধী কতিপয় অসাধু কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা ও বিআরটিএ এর কর্মকর্তা এই সেক্টরকে কলুষিত করার পাঁয়তারা করছে। মালিক-শ্রমিকদের গলা চেপে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে যার বিরুদ্ধে আরটিসি কমিটি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে একটি জরিপ কমিটি গঠন করেছিলেন। জরিপ কমিটির কাজ হলো সড়কের সিলিং অনুযায়ী রুট পারমিট প্রাপ্ত গাড়ী চলাচল করছে কিনা তার সঠিক তথ্য বের করা এবং গত ২১ আগষ্ট থেকে থ্রি হুইলার অটো টেম্পুর জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়। সেখানে রহস্য জনক কারণে থ্রি হুইলারের কোন প্রতিনিধি'কে জরিপ কমিটিতে না রেখে বাস মালিকদের প্রতিনিধি দ্বারা জরিপ কমিটি সম্পূর্ণ করা হয়েছিল।

জরিপ কার্যক্রম চলাকালীন সময় জরিপের নির্ধারিত মাঠে গাড়ীর মালিকরা গাড়ী নিয়ে গেলে আরটিসি প্রতিনিধি হিসেবে থাকা বাস মালিক নেতাদের নিয়োজিত দালাল রা জরিপে গাড়ী পাশ করানোর কথা বলে মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতানোর চেষ্টা করেছিলেন। কোন মালিক দালালদেরকে সাড়া না দেওয়ায় জরিপ কমিটির দায়িত্ব প্রাপ্ত ট্রাফিক বিভাগের কতিপয় কয়েকজন দূর্নীতিগ্রস্থ ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএ কর্মকতা সহ সিন্ডেকেট করে অযৌক্তিকভাবে অটো টেম্পোর চেসিস অস্পষ্ট বা পাঞ্চিং করা হয়েছে মর্মে জরিপ কমিটিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে জানা যায়।

বিষয়টি বিআরটিএ তে ফিটনেস নবায়নের জন্য যাওয়া গাড়ীর মালিকদের নিকট নিশ্চিত করেছেন বিআরটিএ ফিটনেস শাখার কর্মকর্তারা। মালিকরা ফিটনেস পাওয়ার জন্য সরকারি ব্যাংক জমা দেওয়ার পর ফিটনেস এর জন্য গাড়ী প্রদর্শন করা হলে তাদেরকে ফিটনেস দিতে পারবে না বলে জানায় ফিটনেস শাখার কর্মকর্তারা। এদিকে ফিটনেস নবায়ন করতে না পারায় প্রতি পদে পদে চালকরা মামলা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে সেই সাথে মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের জরিমানা আদায় করছে ট্রাফিক বিভাগ। সময়মতো ফিটনেস না পাাওয়ায় ও জরিমানার ভয়ে মালিকরা অসাধু ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে মাসিক চুক্তি করতে বাধ্য হচ্ছে। যার ফলে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

অন্যদিকে বছরে পর বছর হাজারেরও অধীক টেম্পু সময়মত ফিটনেস সনদ, ট্যাক্সটোকেনের ফি পরিশোধ করে রুএ পারমিটের জন্য আবেদন করেছেন অথচ সেই সব রুট পারমিট গুলো প্রদান করা হয়নি। রোড পারমিটের জন্য আবেদনকৃত গাড়ী গুলো সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি ও মামলার স্বীকার হচ্ছে এবং চালক-মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের জরিমানা আদায় করছে ট্রাফিক  বিভাগ। এতে করে সড়কে কর্মরত সার্জেন্টদের ঘুষ নেওয়ার প্রবণতাও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, গণপরিবহন রাস্তায় যাত্রী উঠানো নামানোর ক্ষেত্রে সিএমপি ট্রাফিক বিভাগ বা বিআরটিএ এই দুই কর্তৃপক্ষই গণপরিবহনের উল্লেখযোগ্য বাহন অটো টেম্পোতে যাত্রী উঠানো বা নামানোর জন্য কোন প্রকার স্থান নির্ধারণ না করায় বছরের পর বছর ধরে কোনঠাসা অটো টেম্পো চালকদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে ভূল পার্কিং, প্রতিবন্ধকতার নামে মামলা দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করে চলছে। এ ধরনের কর্মকান্ডের ফলে সরকারের প্রতি মালিক শ্রমিকদের মাঝে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে এবং আস্থা হারাচ্ছে যার জন্য দূর্নীতিগ্রস্থ  কর্মকর্তারাই দায়ী। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে বাঁধা সৃষ্টিকারী কতিপয় ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের যারাই মালিক এবং শ্রমিকদের জিম্মি করে অর্থ হাতানোর চেষ্ঠা করছে তাদেরকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন সংবাদ সম্মেলনের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনের দাবীগুলোর মধ্যে রয়েছে-চেসিস নাম্বার অষ্পষ্ট বা পাঞ্চিং এর অজুহাতে ফিটনেস প্রদানে গড়িমসি ও ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ করে ফিটনেস প্রদান করতে হবে এবং রুট পারমিট নবায়নে গাড়ীর মালিক বা মালিকদের প্রতিনিধির কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া বন্ধ করতে হবে। বছরের পর বছর ঝুলে থাকা আবেদনকৃত অটোটেম্পোর রুট পারমিট দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রদান করতে হবে। রুট পারমিট ইস্যু না করা পর্যন্ত ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, আয়কর সহ সকল ধরনের ধার্যকৃত সরকারী ফি মওকুফ করতে হবে অথবা রুট পারমিটের জন্য ট্রাফিক আইনের জরিমানা আদায় বন্ধ করতে হবে। নগরীতে বিভিন্ন সড়কের মোড় সমূহে যাত্রী উঠা নামার স্থান নির্ধারণ করতে হবে, তা না করে রং পার্কিং বা প্রতিবন্ধকতা মামলা দিয়ে চালক হয়রানি বন্ধ করতে হবে। রং পার্কিং বা প্রতিবন্ধকতা মামলার জরিমানা সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। ট্রাফিক বিভাগের প্রসিকিউশন শাখায় চালক মালিকদের সাথে বৈষম্য মূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে এবং প্রসিকিউশন শাখা দালাল মুক্ত করতে হবে সেই সাথে ডিজিটাল পস মেশিনের মাধ্যমে দ্বিগুণ জরিমানা আদায় বন্ধ করতে হবে। বছরের পর বছর থ্রি- হুইলার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা শীথিল করে মাঠ পরিক্ষার মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। 

বিআরটিএ লাইসেন্স শাখার ঘুষ দূর্নীতি বন্ধ করতে হবে। অযোগ্য সিন্ডিকেট গঠনকারী মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের দ্বারা গঠিত আরটিসি কমিটি বিলুপ্ত করতে হবে এবং যোগ্য প্রনিতিনিধি দ্বারা আরটিসি কমিটি গঠন করতে হবে। সর্বোপরি ৬ দফা দাবী আগামী ৩০ জানুয়ারী ২০২৩ইং এর মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় মালিক, চালকদের নিয়ে চট্টগ্রামে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। উক্ত ৬ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ১৩ই জানুয়ারী লাল পতাকা মিছিল সহকারে মাননীয় পুলিশ কমিশনার'কে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ইলেকট্রনিকস, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সকলকে ধন্যবাদ এবং অটো টেম্পোর মালিক শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে যোগদান করার আহবান ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতার সমাপ্তি করা হয়।

প্যা/ভ/ম